বিভিন্ন ধরনের রান্নায়, লাল চায়ে কিংবা খুশখুশে কাশি কমাতে ব্যবহৃত হয় লবঙ্গ। পরিচিত এই মসলাটি স্বাদ ও ঝাঁজের জন্য পরিচিত হলেও, তার স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে খুব একটা কথা হয় না বললেই চলে। অথচ এই মসলাটি লিভারকে সুস্থ রাখা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ ক্যানসার প্রতিরোধের মতো বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা মোকাবিলাতেও কার্যকর। তাই আজকের ফিচারে তুলে আনা হয়েছে লবঙ্গের স্বাস্থ্য উপকারিতা।
লবঙ্গে উপস্থিত ফেনলিক উপাদান তথা ফ্ল্যাভনেস, আইসোফ্ল্যাভনেস ও ফ্ল্যাভনয়েডস হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কারণ এই যৌগসমূহ হাড়ের ঘনত্বকে বজায় রাখতে ও হাড়ক্ষয় রোধ করতে কাজ করে। কিছু ক্ষেত্রে রিউম্যাটিক আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতেও কাজ করে লবঙ্গতে থাকা উপকারী এই যৌগগুলো।
পাশাপাশি প্রতি এক চা চামচ লবঙ্গ গুঁড়াতে থাকা ম্যাংগানিজ প্রতিদিনের চাহিদার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মেটাতে কাজ করে। হাড়ের গঠনের জন্য ম্যাংগানিজ আবশ্যক একটি মিনারেল।
আয়ুর্বেদে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় পরিচিত লবঙ্গ। যার মাঝে ডায়াবেটিস অন্যতম। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রয়োজন মাফিক ইনস্যুলিন উৎপন্ন হয় না। গবেষণা ও বেশ কিছু পরীক্ষার ফল থেকে দেখা গেছে, লবঙ্গের রস ইন্স্যুলিনের ন্যায় আচরণ করে, যা রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে।
লবঙ্গের উপরে বেশ কিছু গবেষণা থেকে পাওয়া গিয়েছে, এতে উপস্থিত উপকারী বেশ কিছু যৌগ লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ও উপকারী। যার মাঝে একটি যৌগ হল ইউজিনল (Eugenol).
ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ইঁদুরদের উপর করা একটি পরীক্ষায় এই বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে উঠে আসে। দেখা গেছে, যে সকল ইঁদুরদের লবঙ্গর রস মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়েছে তাদের লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা এবং প্রদাহের হার কমেছে।
এছাড়া লবঙ্গতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভারের সমস্যা প্রতিরোধে অবদান রাখে। তবে একটা বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। আলাদাভাবে উচ্চমাত্রার ইউজিনল সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এ কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই পরিমাণমতো লবঙ্গ গ্রহণ করতে হবে।
মুখের ভেতরের ঘা ও গাম ডিজিজের সমস্যা কমাতে লবঙ্গ খুব ভালো কাজ করে। কিছুক্ষেত্রে দাঁতের ব্যথাও কমিয়ে থাকে উপকারী এই প্রাকৃতিক উপাদানটি।
উপরেই উল্লেখ করা হয়েছে যে লবঙ্গতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। মূলত এটাই ক্যানসার প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। টুডেস ডায়টেশিয়ান নামক একটি জার্নাল জানাচ্ছে, মাত্র আধা চা চামচ পরিমাণ লবঙ্গ থেকে যে পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, তা প্রায় আধা কাপ পরিমাণ ব্লুবেরিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমান।
অন্যদিকে একটি ল্যাবরেটরি পরীক্ষা থেকে গবেষকেরা প্রমাণ পাওয়া পেয়েছেন, বেশ কিছু ধরনের ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করতে কাজ করে লবঙ্গ।
Leave a Reply