চীনের পর করোনা সবচেয়ে ভয়াল থাবা বসিয়েছে ইতালিতে। এই মারণ ভাইরাসের কালো থাবায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে দেশটি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে একা একা মারা যাচ্ছেন মানুষ। আর একাই পড়ে আছেন কফিনবন্দি হয়ে।
বুধবার মধ্যরাতে মারা যান রেনজো কার্লো টেসতা। ৮৫ বছরের বৃদ্ধ সংক্রমিত ছিলেন করোনাভাইরাসে। উত্তর ইতালির বার্গামো শহরে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ মানুষটির বাঁচার আশা ছিল না। তাই এ মৃত্যু নিয়ে বিস্ময়, আফশোস, কান্না-কোনওটাই আছড়ে পড়েনি। এমনকি মৃত্যুর সময়েও তার পাশে কেউ ছিল না। তাছাড়া মারণ ভাইরাসের আক্রমণে যেখানে প্রতিদিন কয়েকশো করে মানুষ মারা যাচ্ছে, সেখানে মৃত্যু নিয়ে বিষাদ পালন করার সুযোগই বা কোথায় পাচ্ছে মানুষ! সকলেই ব্যস্ত নিজেকে রক্ষা করতে!
বৃদ্ধ রেনজো কার্লোর মৃত্যুর খবর পেয়েও বিচলিত হয়ে কাউকে ছুটে আসতে না দেখে তেমনটাই ভেবেছিলেন হাসপাতালের সকলে। কিন্তু এক দিন কেটে গেল, দু’দিন, তিন দিন… পাঁচ-পাঁচটা দিন কেটে গেল। পড়ে রইলেন কফিনবন্দি মৃত বৃদ্ধ। কেউ এল না। হাসপাতালের পক্ষ থেকে স্থানীয় চার্চের কবরস্থানে নিয়ে রেখে আসা হয়েছে সে কফিন। সেখানেও এরই মধ্যে জমে আছে কফিনের স্তূপ। রেনজোর মতোই অসংখ্য মৃত মানুষের দেহ অপেক্ষা করছে সৎকারের জন্য! কাউকেই সৎকার করার কেউ নেই, তার ওপরে কবরস্থানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভিড় এড়াতে।
মৃত বৃদ্ধের স্ত্রী, ৭০ বছরের ফ্রাঙ্কা স্টেফানেল্লি জানান, স্বামীকে সৎকার করতেই চেয়েছিলেন তিনি, সব পরিবারের মানুষেরাই যেমন চান। কিন্তু গোটা ইতালি জুড়েই কবরস্থানগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে ভিড়ের জন্য। তার ওপর তিনি এবং তার ছেলেরা সকলেই অসুস্থ অবস্থায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। বাড়ি থেকে হাসপাতালেও যেতে পারেননি তারা। স্টেফানেল্লি বলেন, এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। রাগও করতে পারছি না। ভাইরাসের দৌরাত্ম্যে আমাদের হাত-পা বাঁধা, প্রিয় মানুষের মৃত্যুতেও ঘরে বসে আছি!
করোনাভাইরাসের আক্রমণ বোধহয় চীনের চেয়েও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে চলেছে ইতালিকে। যেভাবে অল্প দিনের মধ্যে হু হু করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ, লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, তাতে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। এই অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এত রোগীর দেহ কোথায় রাখা হবে, তা নিয়েও তৈরি হচ্ছে জটিলতা। এতো অস্বাভাবিক সংখ্যায় মৃত্যুকে সামাল দেওয়ার পরিকাঠামো নেই সে দেশের।
বার্গামো শহরের মেয়র জর্জিও গোরি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা করেছেন সব কবরস্থান বন্ধ করে দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এমনটা ঘটল এই প্রথমবার। তবে কফিনগুলো নিয়ে নিরাপদে রাখা হবে চার্চের বিশেষ ব্যবস্থায়। সৎকার করতে গেলে দেহ থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এর ফলে যে মানুষের ভিড় হবে, তারাও আক্রান্ত হতে পারেন। এমন বিপদ এড়ানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি।
Leave a Reply