নরসিংদীর বাহেরচরে চাঞ্চল্যকর দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ইলমার হত্যার হত্যার পাঁচ বছর পর রহস্য ভেদ হলো।
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যার অনুমতি দিয়েছিলেন বাবা নিজেই। সোমবার ইলমা হত্যাকাণ্ডে পলাতক আসামি মাসুম মিয়াকে গ্রেফতারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এমন বিস্ময়কর তথ্য দেয় সিআইডি।
২০১৫ সালের ২৭ মার্চ বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ইলমা খুন হন। এ ঘটনায় বাদী হয়ে ইলমার বাবা আবদুল মোতালেব সেই সময় নরসিংদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পাঁচ বছর পর জানা গেল, নিজের মেয়েকেই হত্যা করে থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন আবদুল মোতালেব। আর এমন পৈশাচিক কাণ্ড ঘটাতে তিনি সহযোগিতা করেছিলেন ৩০ লাখ টাকার লোভে পড়ে। কিন্তু ওই মোটা অংকের মাত্র চার লাখ টাকা পেয়েছেন তিনি।
সোমবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপমহাপরিদর্শক (সংঘবদ্ধ অপরাধ বিভাগ) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ইলমা তার বাবার লোভের বলি। বাহের চরে শাহজাহান ভূঁইয়া ও সাবেক মেম্বার বাচ্চুর নেতৃত্বে দুটি দলের প্রভাব বিস্তার সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব ছিলো। শাহজাহানের লোকজন প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে শিশু হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর বিনিময়ে শাহজাহানে ইলমার বাবা আবদুল মোতালেবকে ৩০ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রস্তাব লুফে নেন মোতালেব। টাকার লোভে মেয়েকে হত্যার অনুমতি দেন। ’
হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মাসুম মিয়া (শিশু ইলমার ফুপাতো ভাই) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানান ইমতিয়াজ আহমেদ।
ইলমা হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেন সিআইডির উপমহাপরিদর্শক ইমতিয়াজ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের ১ মার্চ রাতে ১৩ জন ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে এক বৈঠকে ইলমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বৈঠকে ইলমার বাবাকে সন্তানের বিনিময়ে ৩০ লাখ টাকার টোপ দেয়া হয়। লোভে রাজি হয়ে যান তিনি। এরপর ওই মাসেরই ২৭ তারিখে সন্ধ্যায় ইলমার দুলাভাই বাবুল বাড়ির পাশে নূরার দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতে পাঠান। বাড়ি ফেরার পথে বাবুল ও ফুপাতো ভাই মাসুমের নেতৃত্বে সাত-আট জন ইলমাকে তুলে নিয়ে ইট ও মুগুর দিয়ে মাথা থেঁতলে ও গলা টিপে হত্যা করে তাকে। ইলমার বাবা পাশেই দাঁড়িয়ে মেয়েকে খুন করার দৃশ্য দেখছিলেন। ’
মেয়েকে হত্যার পর ওই বছরের ৩১ মার্চ মূল আসামিদের বাদ দিয়ে কথামতো শাহজাহানের প্রতিপক্ষ ‘বাচ্চু’ গ্রুপের বিলকিস, খোরশেদ, নাসুসহ অজ্ঞাত চার-পাঁচ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আবদুল মোতালেব।
প্রসঙ্গত নরসিংদী থানার বাহেরচরে শাহজাহান ভূঁইয়া ও সাবেক মেম্বার বাচ্চুর নেতৃত্বে দুটি দলের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে দ্বন্দ্ব ছিলো। এছাড়া শাহজাহান গ্রুপের সদস্য ইলমার হতাকারী মাসুমের সঙ্গে বাচ্চুপক্ষের সদস্য তোফাজ্জলের মেয়ে তানিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ওই প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ালে দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে।
ওই ঘটনায় তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে মাসুম, তার ভাই খসরু ও ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এরপর বাচ্চু গ্রুপের সদস্যদের ক্ষতি করতে শাহজাহানের সদস্যরা ইলমাকে খুনের পরিকল্পনা করে।
ইলমা হত্যার সঙ্গে জড়িত আবদুল মোতালিব, ফুপাত ভাই মাসুম মিয়া, গ্রুপ লিডার শাহজাহান ভূঁইয়া, মা মঙ্গলী বেগম ও মো. বাতেন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
ইলমার বাবা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর মাসুম মিয়াকে কারাগারে পাঠান আদালত।
Leave a Reply